তিতাস হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত একটি নদী এবং বাঙ্গালীদের কাছে তা বিখ্যাত উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র “তিতাস একটি নদীর নাম”-এর কারনে অতি পরিচিত, যা এই নদীর তীর কোল ঘেঁষে বসবাস করা জেলেদের জীবন কাহিনী অঙ্কন করেছে।
তিতাস নামক নদী, যা অনেক মানুষের জীবিকার উৎস, তা এখন বিপন্ন প্রায়।
বাংলাদেশের বাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ শহরের কাছে তিতাস নদীর বুক চিরে
দ্রুত একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে এবং তা অনেক অংশে নদী, এর শাখা
এবং খালের জলপ্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করেছে।স্থানীয় প্রচার মাধ্যম সংবাদ প্রদান করেছে যে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ভারী যান চলাচলের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এখান দিয়ে চলাচলের জন্য সাধারণ যে সমস্ত রাস্তা এবং সেতু রয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে এবং এই সমস্ত ভারী যান চলাচল অনুপযোগী। এই ঘটনায় নেট নাগরিকরা ক্ষুব্ধ।
মাহফুজুর রহমান মানিক একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে বলেন, তিতাস নদীর ওপর বাঁধ দেয়ায় চারপাশের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে ফসল উত্পাদনের ওপর বিশাল প্রভাব পড়ছে। এ নদীর ওপর নির্ভর করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের জীবনে এসেছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে জেলেদের অবস্থা খারাপ। সেখানকার মানুষ ঘরে ফসল তুলতে পারেন না। হাজার হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে পানিতে। পরিবেশ বিপর্যয় তো রয়েছেই।
ব্লগার কল্লোল মোস্তাফা উক্ত এলাকা ঘুরে এসে জানান, ভারতের ত্রিপুরার পালাটানায় ৭২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি ৯৬টি ওভার ডাইমেন্সনাল কার্গো’র (ওডিসি) মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ৩০ নভেম্বর ২০১০ এ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। [..] আশুগঞ্জ বন্দর আর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সড়ক পথ ওডিসি পরিবহনের অনুপযুক্ত হওয়ায় বন্দর উন্নয়ন, ৪৯ কিমি রাস্তা মেরামত ও ১৮ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত করার জন্য ভারত এককালীন ২৫.৫০ কোটি টাকা প্রদান করবে বলে ঠিক হয়। [..] এই রাস্তায় তিতাস নদী ও বিভিন্ন খালের উপর যেসব ব্রীজ ও কালভার্ট রয়েছে সেগুলো এত ভারী কার্গোর ভার বহনের সক্ষম নয়। তাই রাস্তা মেরামত ও প্রশস্ত করণের পাশাপাশি ভারতের আসাম বেঙ্গল কেরিয়ার বা এবিসি ইন্ডিয়াকে দ্বায়িত্ব দেয়া হলো ব্রীজ ও কালভার্টগুলোর পাশ দিয়ে “বিকল্প রাস্তা” তৈরী করার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুনিয়ার আর কোন দেশের শাসক শ্রেণী এইভাবে নিজ দেশের নদী-খালের মাঝখান দিয়ে বাধ নির্মাণ করে আরেক দেশের মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে বলে আমাদের জানা নাই।
কয়েকজন ব্লগার এই এলাকা পরিদর্শনের এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এর জন্য এক ফেসবুকে কার্যক্রমের সৃষ্টি করা হয়। তারা জানান, আমাদের রাজনীতি নেই, আমরা রাজনীতি বুঝি না – কিন্তু সব গেলো সব গেলো বলে আহাজারি করতে পারি! সেই আহাজারীর মাত্রা আরেকটু বাড়াতে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর তিতাসের খণ্ডিত বুকে গিয়ে জানতে চাই সেখানকার
মানুষদের কি মতামত!
আসলে এখানে কি ঘটেছে, সেই বিষয়ে ব্লগার শরৎ চৌধুরী তার অভিজ্ঞতা গ্লোবাল ভয়েস বাংলাকে জানায়, আমরা দেখি নদীর বুক চিড়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। ট্রানজিটের রাস্তা। আমাদের নতজানুতার পথ। এই পথ দেখে আমাদের কষ্ট হয়, ঘৃণা হয়, অবিশ্বাস গাঢ় হয় সরকারের বিবেচনা বোধ আর সদিচ্ছার প্রতি। এই মুহুর্তে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া আর কোন পথ নেই। ব্লগাররা কাজ করতে পারেন স্থানীয় অপনিয়ন লিডার হিসেবে। কেবল রাজধানী-কেন্দ্রীক আন্দোলনের বদলে আমরা এমনও দেখতে পারি যে ব্রাম্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জের ব্লগাররা প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। অবহিত করেছেন স্থানীয় মানুষদের। সংগঠিত করেছেন। এটা আমাদের করতেই হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন