Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

নির্মম সমাজ, নিঃসঙ্গ জীবন ; বিধবা, বিপত্নীকের পুনর্বিবাহ


বাবা বা মায়ের মৃত্যু সন্তানের পক্ষে নিদারুণ শোকের, তবে বাবা-মা যে বয়সেই মারা যান এবং সন্তানও তখন যে বয়সেই উপনীত হোক, এ এক জরামুক্ত চিরসবুজ সম্পর্ক। প্রশ্ন এ নিয়ে নয়, প্রশ্ন হচ্ছে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের কিংবা মায়ের মৃত্যুর পর বাবার মনোভূমে যে দুঃসহ রিক্ততার সৃষ্টি হয়, সন্তান তা ঠিক ততখানি উপলব্ধি করে কি? আর উপলব্ধি করলেও সেই রিক্ততা পূরণের জন্য সে কতটুকু আন্তরিক থাকে এবং তা পূরণের জন্য বাস্তবসম্মত কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে? বিপত্নীক বা বিধবা যে নরনারী আপনার ধারে কাছে আছে তাদের উপর বারেক নজর বুলালে এসব প্রশ্ন আপনাকে অবশ্যই নাড়া দিবে। সেই সঙ্গে এই অনুভূতিও জাগ্রত হবে যে, ক্ষেত্রবিশেষে আমরা কতই না হৃদয়হীন এবং আমাদের হৃদয়াবেগও কতই না স্থূল!
দীর্ঘ একটা জীবন বাবা-মা পরস্পর লতিয়ে-জড়িয়ে ছিলেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে ছিল গভীর ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা। ছিল অকৃত্রিম সহযোগিতা ও নির্ভরতা। সুনিবিড় সাহচর্যে তারা ছিলেন একশা-একাত্মা। তারপর হঠাৎ করেই যখন একজন চলে গেলেন তখন ভাবুন দেখি, অন্যজনের অবস্থাটা।
নিঃসঙ্গতার কি জগদ্দল পাষাণে তিনি চাপা পড়ে গেলেন। কিভাবে তিনি এর থেকে মুক্তি পাবেন? যে মমতাসিক্ত আনুকূল্য এতদিন তাকে সচল রেখেছিল তা যে ছিন্ন হয়ে গেল! এখন কে তার জীবনচক্রে গতি যোগাবে? যেই নিবিড় সাহচর্য তার মাঝে প্রাণশক্তি যোগাত, তা যে হারিয়ে গেল, ততে তার কর্মব্যস্ত জীবন নিস্তরঙ্গ, নিথর হয়ে গেল না কি? এই নিস্তরঙ্গতার উপশমের জন্য দরকার এক তীব্র প্রণয়াঘাত। তা তিনি কোথায় পাবেন? ব্যক্তি জীবনে তার ছিল এক পরম নির্ভরতা। সেই নির্ভরতায় দেহমন হয়ে উঠেছিল ঋজু-ঋদ্ধ এবং তা তাকে করেছিল বিচিত্র ভারবাহী। আজ সে নির্ভরতা অন্তর্নিহিত। ফলে মানসিকভাবে তিনি ভেঙ্গে চুরমার। এখন কোন অবলম্বনে তিনি তার অন্তর্জীবনের ঋজুতা ফিরে পাবেন? তার রয়েছে এক বিস্তীর্ণ জগত। সেখানে আছে তার দায়বদ্ধতা। সে জন্য চাই দুর্দান্ত উদ্যম ও দুর্মর প্রাণশক্তি। অথচ জীবনের দোসর ও একান্ত সহযোগী হারিয়ে এখন তিনি বিপর্যস্ত ও ভগ্নস্পৃহ।
তার সুবিন্যস্ত ও অভ্যস্ত জীবন জেরবার। মন স্মৃতিভারাক্রান্ত, দ্বিধাদীর্ণ। স্নায়ুতে গভীর ক্লান্তি। এ অবস্থা থেকে তার উদ্ধারের উপায় কী? আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশি এরূপ ক্ষেত্রে এসে পাশে দাঁড়ায় বটে। তারা বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং প্রত্যেকে আপন আপন বুদ্ধি-বিবেচনা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতাও করে। কিন্তু তা তো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। তাতে ক্ষণিকের জন্য বেদনা লাঘব হয় কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে উপস্থিত প্রয়োজনটুকু মেটে। এখানে দরকার তো এমন কোনো ব্যবস্থা, যা দ্বারা তার বিধ্বস্ত জীবন পুনর্গঠিত হবে। এর জন্য চাই বিশ্বাস ও নির্ভরতার একটি স্থান। যেমন তার আগে ছিল। অর্থাৎ দাম্পত্য জীবন পুন:স্থাপনই হচ্ছে তার বর্তমান সমস্যাবলির প্রকৃত সমাধান। তিনি যা কিছু হারিয়েছেন তা লাভ তো হয়েছিল এ পথেই। সুতরাং পুনরায় তা পেতে হলে এ পথেই তার চলতে হবে। এরই মধ্যে নিহিত রয়েছে তার জন্য স্বস্তি ও শৃঙ্খলা। এরই মাধ্যমে তিনি পেতে পারেন চলার প্রেরণা ও উদ্দীপনা। ইসলাম যে বৈবাহিক ব্যবস্থা দিয়েছে এই তো তার তাৎপর্য। ইরশাদ হয়েছে-
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
(তরজমা) তাঁর এক নির্দশন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ করতে পার এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন রয়েছে সেইসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।-সূরা রূম (৩০) : ২১
বিবাহের তাৎপর্যের প্রতি ইঙ্গিত করার সাথে সাথে এ আয়াতে রয়েছে চিন্তার আহবান। চিন্তাশীলমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবে যে, বিবাহের ভেতর যেসব উপকারিতা নিহিত তা কেবল বিবাহ দ্বারাই অর্জিত হতে পারে, অন্য কোনো উপায়ে নয়। কাজেই একবার বিবাহ করার পর যখন দাম্পত্য জীবনের সুফল ভোগ করা হয়েছে এবং সেই সুফলভোগে জীবন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তখন অন্য রকম জীবনের চিন্তা করা বৃথা। বরং স্ত্রী বা স্বামী বিয়োগের পর পুনর্বিবাহ হচ্ছে আপতিত সব জটিলতা নিরসনের প্রকৃষ্ট উপায়।
বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে ভাবছি না কিংবা এ ভাবনাকে আমরা সমাজের ভেতর চারিত করতে পারছি না। যে কারণে মানুষ পুনর্বিবাহের বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা কঠিন বাধা ছেলেমেয়ে। মা কিংবা বাবার পুনর্বিবাহকে অধিকাংশ সন্তানই মেনে নিতে পারছে না। সমাজের সর্বস্তরেই এ অবস্থা বিরাজমান। বিখ্যাত এক ব্যক্তির জীবনীগ্রন্থে পড়েছিলাম, মা পুনর্বিবাহ করায় তিনি তার মুখদর্শন করতে রাজি ছিলেন না এবং মৃত্যু পর্যন্ত তা করেননি! বলিহারি তার মাতৃভক্তি! এমন কত পিতাই না আছেন, প্রিয় সন্তানদের প্রবল বাধার মুখে যারা বিবাহের ইচ্ছা ত্যাগে বাধ্য হন। অথচ বিবাহই ছিল তাদের আসল সমাধান। কিন্তু কী করা যাবে।
সন্তান বলে কথা! তাদের ক্ষমতাই আলাদা। অপত্য স্নেহই তাদের সেই ক্ষমতার উৎস আর সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যত পার তাদের উপর ছড়ি ঘোরাতে থাক। তারা একটুও চিন্তা করে না বাবার মানসিক অবস্থা কী? কী যাতনার ভেতর তার দিন কাটছে!
সন্তানদের আপত্তির একটা বড় কারণ হল পিতার সম্পদে অংশীদার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু ঈমানদারদের তো এই ভয় করা উচিত নয়। সে জানে সম্পদের বিষয়টি নিয়তি নির্ধারিত। প্রত্যেকের কিসমত স্থিরকৃত। একের কিসমতে অন্যে ভাগ বসাতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে-
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
(তরজমা) এরা কি আপনার প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করি। পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি। যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। এবং তারা যা জমা করে তা থেকে আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ (৪৩) : ৩২
আবার অনেক সময় পিতা পর হয়ে যায় কি না সেই আশঙ্কাও থাকে। সন্তান এমন কাউকে দেখেও থাকবে যে, দ্বিতীয় বিবাহের পর প্রথম পক্ষের সন্তানদেরকে অবহেলা করছে। তা কেউ করলে সেটা অন্যায়, তার সংশোধন জরুরি। কিন্তু কেউ তা করে থাকলে সকলেই যে করবে এমন কোনো কথা নেই। এর বিপরীতও তো চোখে পড়ে। আসলকথা ন্যায়নিষ্ঠতা। এটা সকলেরই থাকা উচিত। যেমন পিতার, তেমনি সন্তানদেরও। কোনো অন্যায় আচরণই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে সমাজেরও দায়িত্ব আছে। সমাজ যদি বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় তবে সহজেই সকল অন্যায়ের রোখথাম সম্ভব।
কিন্তু সমস্যা তো সেখানেও। ব্যক্তি থেকেই তো সমাজ। ব্যক্তির চিন্তা যেহেতু স্বচ্ছ নয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই সমাজ মানসও এ বিষয়ে অনুকূল নয়। আমাদের সমাজ বিপত্নীকের পুনর্বিবাহকে ভালো চোখে দেখে না। বলাই হয়, আগের বউকে ঠিক ভালবাসত না। ভালবাসলে শাহজাহানের মতো সেই স্মৃতি বুকে আগলে রাখত। দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা করত না। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মুসলিমের দৃষ্টি কেন শাহজাহানেই থেমে থাকবে? দৃষ্টি কেন আরও প্রসারিত হয় না? সব ব্যাপারে আমাদের নজর তো চলে যাবে সোনার মদীনায়। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তো আমাদের আদর্শ এবং আদর্শ তাঁর সাহাবীগণও।
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা রা.কে তিনি কতই না ভালবাসতেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। কিন্তু তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি ঠিকই বিবাহ করেছিলেন। আমাদের সেই মহিয়সী মায়ের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালবাসা নিয়ে কি কোনো প্রশ্নের অবকাশ আছে? কি গভীর ভালবাসাই তিনি জীবনভর তাঁর প্রতি লালন করেছিলেন। এমনকি আম্মাজান হযরত সিদ্দীকা রা. পর্যন্ত সেই ভালবাসার অনুযোগও করেছিলেন। সুতরাং স্ত্রী বিয়োগের পর পুনর্বিবাহ প্রথমা স্ত্রীর প্রতি বীতরাগের আলামত নয়। এটা একটা প্রয়োজন এবং সমস্যা নিরসনের উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা। মরহুমা স্ত্রী যত অনন্যা সাধারণই হোক তারপরও এ ব্যবস্থা গ্রহণ অনাকাঙ্খিত নয়।
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রা.কে দেখুন না। তাঁর মতো স্ত্রীভাগ্য কার কখন হয়েছে, না হতে পারে? সেই মহিয়সী স্ত্রী নারীকুল শিরোমণি হযরত ফাতিমা যাহরা রা.-এর ওফাতের পর হযরত আলী রা.ও তো আবার বিবাহ করেছিলেন এবং তার পুত্র ইতিহাসের বীর ও বুযুর্গ মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রাহ. সেই পক্ষেরই সন্তান। তা হযরত ফাতিমা রা.-এর প্রতি তাঁর ভালবাসায় কি কোনো খামতি ছিল? তার শত্রুও কি এমন কথা মুখে আনবে? আসলকথা হচ্ছে প্রয়োজন। প্রয়োজনের তাগিদে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে কারও কাছে ভালবাসার পরিপন্থী মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এবং অর্ন্তদৃষ্টি নিক্ষেপ করলে কাজটিকে সেই ভালবাসার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হবে না। প্রয়োজনের সাথে ভালবাসার কিসের সংঘাত। প্রয়োজনের খাতিরেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনর্বিবাহ করেছিলেন এবং করেছিলেন তার সাহাবীগণও। কাজেই এটা তাদের সুন্নত। এতে আপত্তির অবকাশ নেই। বরং সুন্নত হিসেবে এ ব্যবস্থাকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। সন্তানদেরই উচিত নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বাবাকে পুনর্বিবাহে প্রস্ত্তত করা। এটা তাদের কর্তব্য। এতে বাবার যেমন বহুবিধ সমস্যার নিরসন হবে, তেমনি তাদের নিজেদের পক্ষেও হবে স্বস্তির কারণ।

তিতাস একটি মরা নদীর নাম

তিতাস হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত একটি নদী এবং বাঙ্গালীদের কাছে তা বিখ্যাত উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র “তিতাস একটি নদীর নাম”-এর কারনে অতি পরিচিত, যা এই নদীর তীর কোল ঘেঁষে বসবাস করা জেলেদের জীবন কাহিনী অঙ্কন করেছে।
Titash_Ekti_Nadir_Naam
তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রের দৃশ্য
তিতাস নামক নদী, যা অনেক মানুষের জীবিকার উৎস, তা এখন বিপন্ন প্রায়। বাংলাদেশের বাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ শহরের কাছে তিতাস নদীর বুক চিরে দ্রুত একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে এবং তা অনেক অংশে নদী, এর শাখা এবং খালের জলপ্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় প্রচার মাধ্যম সংবাদ প্রদান করেছে যে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ভারী যান চলাচলের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এখান দিয়ে চলাচলের জন্য সাধারণ যে সমস্ত রাস্তা এবং সেতু রয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে এবং এই সমস্ত ভারী যান চলাচল অনুপযোগী। এই ঘটনায় নেট নাগরিকরা ক্ষুব্ধ।
মাহফুজুর রহমান মানিক একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে বলেন, তিতাস নদীর ওপর বাঁধ দেয়ায় চারপাশের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে ফসল উত্পাদনের ওপর বিশাল প্রভাব পড়ছে। এ নদীর ওপর নির্ভর করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের জীবনে এসেছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে জেলেদের অবস্থা খারাপ। সেখানকার মানুষ ঘরে ফসল তুলতে পারেন না। হাজার হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে পানিতে। পরিবেশ বিপর্যয় তো রয়েছেই।
Transit-through-Titas-River-4
মালামাল বহনের অন্য কোন রাস্তা ছিলনা? কেন ট্রানজিটের এত তাড়াহুড়ো?
ব্লগার কল্লোল মোস্তাফা উক্ত এলাকা ঘুরে এসে জানান, ভারতের ত্রিপুরার পালাটানায় ৭২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি ৯৬টি ওভার ডাইমেন্সনাল কার্গো’র (ওডিসি) মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ৩০ নভেম্বর ২০১০ এ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। [..] আশুগঞ্জ বন্দর আর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সড়ক পথ ওডিসি পরিবহনের অনুপযুক্ত হওয়ায় বন্দর উন্নয়ন, ৪৯ কিমি রাস্তা মেরামত ও ১৮ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত করার জন্য ভারত এককালীন ২৫.৫০ কোটি টাকা প্রদান করবে বলে ঠিক হয়। [..] এই রাস্তায় তিতাস নদী ও বিভিন্ন খালের উপর যেসব ব্রীজ ও কালভার্ট রয়েছে সেগুলো এত ভারী কার্গোর ভার বহনের সক্ষম নয়। তাই রাস্তা মেরামত ও প্রশস্ত করণের পাশাপাশি ভারতের আসাম বেঙ্গল কেরিয়ার বা এবিসি ইন্ডিয়াকে দ্বায়িত্ব দেয়া হলো ব্রীজ ও কালভার্টগুলোর পাশ দিয়ে “বিকল্প রাস্তা” তৈরী করার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুনিয়ার আর কোন দেশের শাসক শ্রেণী এইভাবে নিজ দেশের নদী-খালের মাঝখান দিয়ে বাধ নির্মাণ করে আরেক দেশের মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে বলে আমাদের জানা নাই।
কয়েকজন ব্লগার এই এলাকা পরিদর্শনের এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এর জন্য এক ফেসবুকে কার্যক্রমের সৃষ্টি করা হয়। তারা জানান, আমাদের রাজনীতি নেই, আমরা রাজনীতি বুঝি না – কিন্তু সব গেলো সব গেলো বলে আহাজারি করতে পারি! সেই আহাজারীর মাত্রা আরেকটু বাড়াতে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর তিতাসের খণ্ডিত বুকে গিয়ে জানতে চাই সেখানকার
মানুষদের কি মতামত!
আসলে এখানে কি ঘটেছে, সেই বিষয়ে ব্লগার শরৎ চৌধুরী তার অভিজ্ঞতা গ্লোবাল ভয়েস বাংলাকে জানায়, আমরা দেখি নদীর বুক চিড়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। ট্রানজিটের রাস্তা। আমাদের নতজানুতার পথ। এই পথ দেখে আমাদের কষ্ট হয়, ঘৃণা হয়, অবিশ্বাস গাঢ় হয় সরকারের বিবেচনা বোধ আর সদিচ্ছার প্রতি। এই মুহুর্তে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া আর কোন পথ নেই। ব্লগাররা কাজ করতে পারেন স্থানীয় অপনিয়ন লিডার হিসেবে। কেবল রাজধানী-কেন্দ্রীক আন্দোলনের বদলে আমরা এমনও দেখতে পারি যে ব্রাম্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জের ব্লগাররা প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। অবহিত করেছেন স্থানীয় মানুষদের। সংগঠিত করেছেন। এটা আমাদের করতেই হবে।

ভূমিকম্প! আতঙ্ক নয় দরকার সচেতনতা

স্রষ্টা চাইলে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে পারে পৃথিবীতে। মানুষের হাত নেই এখানে, কিছুই করার নেই। তাই বলে ভয়ে আতঙ্কে ঘাবড়ে গেলে চলবে না বরং শক্তি সঞ্চয় করতে হবে আমাদেরকে।

৬-৮ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে কিছুক্ষন আগে কাঁপিয়ে গেলো গোটা দেশ। এর কেন্দ্র ছিল ভারতের সিকিমে। কেন্দ্রের গভীরতা ছিল মাত্র ২০-৭ কিঃ মিঃ। কাছাকাছি এলাকায় পর পর দুইটি কম্পন হয় একটির মাত্রা ছিল ৬-৮ অন্যটির ৪-৮ প্রথমটি দ্বিতীয়টি
আরও বিস্তারিত জানতে এবং নিয়মিত আপডেট জানতে ক্লিক করুন এমন আঘাত আসতেই থাকবে- আমাদেরকেও হতে হবে সচেতন। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। জেনে নিন আমরা কতটা ঝুকির মধ্যে আছি আর আমাদের কি করার আছে।earth quake bangladesh
রাতে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে স্ত্রীকে ডাকা ডাকি করেন – ভূমিকম্প হচ্ছে….!! বিল্ডিংটি কেপে উঠছে…!!! এই বুঝি থেমে গেলো জীবনের গল্প…!!! পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গেলো একটি ভূখন্ড। ঢাকা ইতিহাসে নাম লিখালো দক্ষনি আমেরিকার ইনকা সভ্যতার মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত আরেকটি শহরে। বন্ধুটি এতটাই আতংকগ্রস্থ হয়ে পরেছেন যে এক পর্যায়ে আমার কাছে সিদ্ধান্ত চাইছেন যে পরিবার নিয়ে ঢাকা যাবো কি না। আমি বন্ধুর মনের অবস্থা দেখে বললাম সপ্তাহ খানেক পরিবার থাকুক না গ্রামে। শেষ পর্যন্ত তিনি পরিবার রেখেই ঢাকা আসলেন কাজে যোগ দিতে।আমার বন্ধু একটি জাতিয় দৈনিকের সহকারী সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছেন এবং পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। গত বছর ঈদে ছুটি শেষে কর্মস্থলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তিনি একটি ভাড়া বাসার পঞ্চম তলায় থাকেন।
এমন আশংকা শুধু আমার বন্ধুর মনে নয় বরং অপরিকল্পিত ও নির্যাতিত নগরী ঢাকার অনেক মানুষই আজকাল স্রষ্টার উপর নিয়তী অর্পন করে রাতে বিছানায় ঘুমোতে যান। আমরা রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিনোদন এ সবের মাঝে ডুবে থেকে যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করিনা কেন- সাম্প্রতিক কালের মৃদু ভূমিকম্প সমূহ আমাদেরকে বার বার সতর্ক করছে অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের। আসুন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করি।
ভূমিকম্প কি?
গোলাকার এই পৃথিবী অনেকগুলো ব্লকে বিভক্ত।
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত মূল যে চারটি স্তর আছে এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রথম স্তরটি ১২০০ কি:মি:, ২য় টি ২৩০০ কি: মি:, ৩য় টি ২৮০০ কি: মি: এবং ত্বকের স্তরটি মাত্র ৮০ কি: what is earth quake, bangladeshমি: পুরু। সর্বশেষ বা ত্বকের এই স্তরটি সমস্ত পৃথিবী জুড়ে একটি স্তর নয় বরং বিভিন্ন ব্লক বা প্লেটে বিভক্ত যা ট্যাকটোনিক প্লেট (tectonic plates) নামে পরিচিত।
ট্যাকটোনিক প্লেট একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়, আঘাত করে এবং কখনো পিছলে পরার ঘটনা ঘটে। দুটি ট্যাকটোনিক প্লেটের সংযোগ স্থলকে বলা হয় প্লেট বাওয়ান্ডারী। একটি প্লেট যখন হঠাৎ করে অন্যটি থেকে স্লিপ করে তখন প্লেট বাওয়ান্ডারী এলাকায় ভূমিকম্পের (earthquake) সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় বড় ভূমিকম্পের আগে বার বার মৃদু আকারে ভূমিকম্প দেখা দেয়। এবং বড় ভূমিকম্পের পর সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরান্তে মৃদু ভূমিকম্প ঘটতে দেখা যায়।
ভূমিকম্প পরিমাপ:
measurement of earthquake bangladeshসিসমোগ্রাফ (seismographs) নামক যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়। একটি স্প্রিং এ ভারী বস্তুর সাথে গ্রাফ অংকন কলম যুক্ত থাকে এবং পেপার ড্রাম যুক্ত থাকে। যখন ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তখন মাত্রানুযায়ী গ্রাফ তৈরী হয় যা দেখে মাত্রা বুঝা যায়।
এই গ্রাফটির একক প্রকাশ করা হয় রিখটার স্কেলে ।ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত এই যন্ত্র প্রতিনিয়ত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস:
বিগত ১৫০ বছরের বাংলাদেশে ৭ টি বড় আকারের ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে দুটির কেন্দ্র ছিলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এর মধ্যে একটি ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই ঘটে, যার কেন্দ্র ছিলো সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। ৭.৬ মাত্রার সে ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তা তেমন উল্লেখ যোগ্য নয়। কারণ সে সময় বড় দালানে মানুষ বসবাস করতো না।
১৮৮৫ মালের ১৪ জুলাই একই মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে যার কেন্দ্র ছিলো মানিকগঞ্জ। যেই ভূমিকম্প বদলে দেয় ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি। এই ভূমিকম্পের পূর্বে ব্রহ্মপূত্র নদের মূল স্রোত প্রবাহিত ছিলো জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় কিন্তু বগুড়া সিরাজগঞ্জ এলাকার ভূমি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় যমুনা সৃষ্টি হয় মূল প্রবাহের। এর পূর্বে যমুনা একটি খালের সমান ছিলো। ব্রহ্মপূত্র জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে পরিনত হয় মরা নদে।
আরো কয়েকটি ভূমিকম্প বাংলাদেশে কেন্দ্র না হলেও ধ্বংসের স্বাক্ষর রেখে যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প যার কেন্দ্র ছিলো ভারতের শিলোং শহরে। উল্লেখযোগ্য আরেকটি হচ্ছে ১৭৬২ সালে ঘটে যাওয়া চট্টগ্রাম-আরাকানের ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প ।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুকি:
জানুয়ারী ২০০৬-মে ২০০৯ এই সময়ের মধ্যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে ৮৬ টি ছোট ও ৪ টি মাঝারী মাত্রার কম্পনের রেকর্ড ধারন করেন। মে ২০০৭-জুলাই ২০০৮ এ অন্য একটি রেকর্ডে ৯০ টি কম্পনের রেকর্ড আছে এর মধ্যে ৯ টির মাত্রা ছিলো রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার উপরে এবং ৯৫% ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কি: মি: এর মধ্যে। আশংকা করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সুনামী সহ দেশে ব্যপকাকারে ধ্বংশযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে। বুয়েট কতৃক তৈরী বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ন এলাকার ম্যাপ থেকে দেখা যায় দেশের ৪৩% এলাকা উচ্চ ঝুকিপূর্ন, ৪১% মাঝারী ঝুকিপূর্ন ও ১৬% স্বল্প ঝুকির মধ্যে আছে।
কি ঘটতে পারে !
বড় ভূমিকম্পে দেশ জুড়ে হতাহতের সম্ভাবনা থাকলেও ঢাকার পরিনতি নিয়ে বিশেষজ্ঞগন এতটাই আতংকিত যে ভয়ে পুরোটা বলছেননা বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের লেখায় ও মিডিয়াতে সাক্ষাৎকারে শুধু আলোচনা হয় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কি হবে। এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ তা কেউ বলছেননা। বলা হচ্ছে ঢাকার ৩০% দালান ধ্বসে যেতে পারে। যে বিষয়টি
earth-quake-bangladesh
৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচাইতে বেশী ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে ঢাকা শহরের।
অনেকের মাথায় নেই তা হলো শহরের গ্যাস লাইন ফেটে গোটা শহর পরিনত হতে পারে একটি অগ্নিকুন্ডে। যে পরিমান মানুষ বিধ্বস্ত দালানের নিচে চাপা পরে মারা যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার আশংকা তার চাইতে অরেক অনেক গুন বেশী। ভেঙ্গে পরবে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি। ব্যাংকে, শেয়ার মার্কেটে কোটি কোটি টাকা থাকলেও বেচে থাকা মানুষের খাদ্য কেনার জন্য নগদ টাকা থাকবেনা হাতে। কোটি টাকায় তৈরী স্বপ্নের বাড়ীটি লাখ টাকায় কেনার মতো লোক খুজে পাওয়া যাবেনা। মানুষ খাদ্য ও নিরাপত্তার খোজে ছুটতে থাকবে গ্রামের দিকে কিন্ত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরায় হাটতে থাকবে পরিবার নিয়ে শত শত মাইল! পথে ঘাটে দিনে দুপুরে খুন-লুট পাট হবে নিত্য দিনের ঘটনা- এমন ঘটনা ঘটতে পারে একটি রুটির জন্য! মানুষের মৃতদেহ পচনের ফলে সারা দেশে ছরিয়ে পরতে পারে রোগ, চিকিৎসার অভাবে সৃষ্টি হতে পারে মহামারী। দেশের সরকার, বিরোধি দল, সেনাবাহিনী সহ যাদের সাহায্য আশা করে দেশবাসী তারাও নিজ পরিবারের বাইরে ভাবার মতো বাস্তব পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। ধারনা করা হচ্ছে পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো শহরের পরিনতি ১৬০০ শতাব্দীর ইনকা সভ্যতার মতো হলে সেটি হবে ঢাকা!
চিত্রটি মাত্রাতিরিক্ত কাল্পনিক মনে হতে পারে- এমন বিপর্যয় মোকাবেলা করার প্রস্তুতি সবার থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলক ভাবে কম হবে।
আমাদের করনিয়:
ভূমিকম্প এমন একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ যার কোনো পূর্বাভাস নেই। নিজেদেরকে সজাগ ও সতর্ক রেখে যতটুকু রক্ষা পাওয়া যায়। প্রত্যেকের উচিৎ নিজ পরিবারের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষন what to do during earthquake-bangladeshদেয়া যে ভূমিকম্প শুরু হলে কে কিভাবে নিজেকে রা করার চেষ্টা করবে।
সরকারের এখনই পরিকল্পনা করা উচিৎ ঢাকা শহরের মানুষকে সারা দেশে পূনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে ঢাকা শহরকে নিরাপদ বাসস্থান সৃষ্টির দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করা। এ ব্যপারে মিডিয়াতে বার বার সতর্ক করা হলেও সরকার বা নীতি নির্ধারকদের উদাসিনতা দেখে সন্ধেহ হয় যে তাদের কাছে মানুষের জীবনের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না। আভ্যন্তরীন পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের উচিৎ এই ঝুকিপূর্ণ ভূখন্ডের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যন্ডের মতো দেশ গুলোতে স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক জনমত তৈরী করা। মনে রাখতে হবে ”টু থাউজেন্ড টুয়েল্ভ” অথবা ”ডে আফটার টুমোরো” ছবির বাস্তব দৃশ্যটি সংগঠিত হওয়ার আগেই ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে। 

পাকিস্তানসহ অন্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশকে সমর্থন দেয়া আসলেই কি অযৌতিক বা অনুচিত?

গত কিছুদিন আগে দেশে ক্রিকেট উৎসবের মহোৎসব বসেছিল এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সৌজন্যে। তার পাশাপাশি কিছু মানুষ দাবি তুলেছিল যে বাংলাদেশ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের অন্য কোন দলকে সমর্থন করা চলবেনা। এর পাশাপাশি স্টেডিয়ামে অন্য দেশের পতাকা বহন করার এবং তা প্রদর্শন করা তো যাবেনা-ই।
এই ব্যাপারে তারা ব্লগে এবং মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি করেছে। প্রথম আলোতে ফারুক ওয়াসিফ এই ব্যাপারে একটা পুরো প্রন্ধই রচনা করে দিয়েছেন, “খেলায় পাকিস্তানকে সমর্থন কেন?”
(http://www.prothom-alo.com/opinion/article/166350)
আমার বক্তব্য হল, ঢালাওভাবে বিষয়টা না দেখে আরও র‍্যাশনালী বা লিবারেলভাবে বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমাদের দেশে স্পষ্টতই আইন আছে দেশের মাটিতে অন্যদেশের imagesপতাকা না উড়ানোর ব্যাপারেঃ
“Except as stated in the above Rules, the flag of a Foreign State shall not be flown on any car or building in Bangladesh without the specific permission of the Government of the People’s Republic of Bangladesh.”
(People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, article 9.IV)
তো, এইখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো আসলেই একটা বেআইনি কাজ। বাংলাশের অধিবাসী হয়ে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকা উচিত নয়। সেইক্ষেত্রে সংশয় বা অস্পষ্টতার কিছু নেই।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, কিছু মানুষ অন্য দেশকে সমর্থন দেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর রাগ প্রকাশ করে ফেসবুক আর ব্লগে বিভিন্ন মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বলতে গেলে ৫০-৬০% লোক যে বাংলাদেশের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। পাকিস্তানকে যে কোনমতেই সমর্থন করা যায়না, সেই ব্যাপারে তারা অনেকেই অনেক অনেক যুক্তির অবতারণা করছেন, এমনকি পাকিস্তানকে যারা সমর্থন করে, তাদের রাজাকার, নব্য রাজাকার, রাজাকারের দোসর, ছাগু, পাকি জারজ ইত্যাদি নানান ধরণের তকমা দিয়ে ভরিয়ে ফেলছেন।

৭১’ সালে পাকিস্তানের বর্বর ভূমিকার কথা সবাই জানে। পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেজন্য ক্ষমা চায়নি,  এটাও সত্য। কিন্তু, বাংলাদেশে সরকার তো অনেক আগেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিয় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করা অনৈতিক বা অনুচিত হবে কেন?
কয়েক বছর আগে রাহিন রায়হান নামের এক ব্লগার (সম্পর্কে আমার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দের ছোট ভাই) প্রথম আলো ব্লগে লিখেছিলেন, “একালের নব্য যুদ্ধাপরাধী আবার কারা? আমি আসলে আমাদের তরুণ সমাজের সেই অংশটার কথা বলছি যারা নিজ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে উদাসীন। দেশের তরুণ সমাজের বড় একটা অংশ কিন্তু এদের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানের খেলা হলে তাদের গ্যালারীতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে। তাদের গালে আঁকা থাকে পাকিস্তানের পতাকা। এবং হয়ত বুকেও। এমনকি বাংলাদেশের সাথে খেলা হলেও এরা অনেকেই প্রকাশ্যে এবং অনেকেই মনে মনে পাকিস্তানের শুভ কামনা করে থাকে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হারলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়  yahooooo Pakistan jitse. shabash Pakistan!!!!!!!!. তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। অবাক হয়ে ভাবি এরা কি আসলে বাংলাদেশি? এদের যুক্তি পাকিস্তানের প্লেয়াররাতো আর ১৯৭১ এর জেনোসাইডে অংশ নেয়নি। তো তাদের সমর্থন করলে দোষ কোথায়? না। এই যুক্তি আমি খন্ডাবো না। সত্যি বলতে আমার রুচি হয়না। এই নব্য রাজাকারদের আমার বোঝানোর কিছু নেই”।
(http://prothom-aloblog.com/posts/7/145671)
আসুন, আমরা বুঝতে চেষ্টা করি, এই ধরণের তকমা দেয়া আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত , সেই ব্যাপারটা। আর বুঝে দেখি আসলে এইসব ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদির দাবিগুলো আসলে কতটা বাস্তবসম্মত।
(২)
একসময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টেস্ট বা ওয়ানডে কিছুই খেলতো না। বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাস্টাস পায়, আর ২০০০ সালে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। তার আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য ক্রিকেট নেশনকে সমর্থন করতে হয়েছে।
পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ বলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন করে এসেছে। তবে এটি পাকিস্তানকে সমর্থন করার একমাত্র কারণ নয়। পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোর অন্যতম অনেকদিন ধরেই। তারা ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকটের শিরোপা জেতে। এর আগে ও পরে 481468137-10-jpg_150712তারা অসংখ্য টুর্নামেন্ট এবং দ্বি-পাক্ষিয় সিরিজ জয়লাভ করেছে বিশ্বের সব ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে। তবে, শুধু সাফল্য দিয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেট-উৎকর্ষতা বিচার করা যাবেনা। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা যাকে বলা হয়, “The Game of Gloriuos Uncertainty”.  আর ক্রিকেট যদি অনিশ্চয়তার খেলা হয়, তবে এর সবচেয়ে সক্ষম ও বাস্তব উদাহরণ হল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। তারা এমন একটা দল যারা একটা হারা ম্যাচ, যেখানে জয় অসম্ভব মনে হয়, সেখান থেকেও ম্যাচ জিতে আসে। তাদের খেলায় তাই আছে অনিশ্চয়তা, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা।
তবে, মানুষ যেহেতু জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে, হারতে হারতে জিতে যাওয়া ম্যাচের কথাই বেশি মনে রাখে, তাই পাকিস্তানের নৈপুণ্য ভাস্বর আসাধারণ সব জয়কেই মানুষ বেশি মনে রাখে। যেমনঃ ১৯৮৪৫ সালে শারজায় জাভেদ মিয়াদাদের শেষ বলে মারা ছক্কায় অথবা ২০১৪ সালে আফ্রিদির পরপর দুই বলে ছক্কা মেরে দলকে জেতানোর স্মৃতিই মানুষের চোখে বেশি ভাসে।
আমি যে কথা এখানে স্পস্ট করে বলতে চাচ্ছি, সেটা হল বাংলাদেশের মানুষ বাস করে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের নিজেদের জীবনেও অনেক রকম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। হরতাল, রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে মানুষ জানেনা যে, সে আজ বাসা থেকে বের হলে সুস্থমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা? মধ্যবিত্ত বাঙালি জানেনা সামনের মাসের বাড়িভাড়া সে ঠিকমত দিতে পারবে কিনা, যদি বাড়িওয়ালা বছরের পর বছর ভাড়া বাড়িয়েই চলেন।
তবুও তারা দিনশেষে ‘যুদ্ধজয়’ করে বাসায় ফিরে আসে। মাস শেষে সে টেনেটুনে ভাড়া ঠিকই দেয়।
অনিশ্চয়তার ঘোরাটোপে বাস করা বাংলাদেশের মানুষ, তাই পাকিস্তানের পারফরম্যান্স বা খেলার সাথেই যেন নিজেদের জীবনের মিল খুজে পায়। পাকিস্তান তাই নিজের অজান্তেই তাদের কাছে প্রিয় ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছে।
(৩)
আমাদের সমাজে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে প্রতিবাদের ভাষাই হল পাকিস্তান বিরোধিতা করা। উগ্র জাতীয়তাবাদী এই সকল লোক যে কোন ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনা, নিন্দা আর মুন্ডুপাতকেই দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসেবে মনে করেন, সে ইস্যু বাস্তবসম্মত বা যুক্তিযুক্ত হোক বা না হোক।
যেমন সচলায়তন ব্লগে ধ্রুব আলম নামে একজন কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলেন “পাকিস্তান ভাল খেলে, তাই সমর্থন দেই। আসলেই?” নামে। সেখানে তিনি কিছু হাস্যকর স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে প্রমাণ চেষ্টা করেছেন যে, পাকিস্তান আসলেই অতটা ভাল খেলেনাঃ
(http://www.sachalayatan.com/guest_writer/51688)
অথচ, তার দেয়া পরিসংখ্যান থেকেই এটা বোঝা যায় যে, পাকিস্তান অসাধারণ একটা ক্রিকেট দল। ধ্রুব আলম নিজেই লিখেছেন, ২০০০ সালের পর থেকে পাকিস্তান ভারতের সাথে ৪৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে জয়লাভ করেছে ২৫ টিতে, হেরেছে ২৩ টিতে।
সেই লেখার শেষে এই উগ্র জাতীয়তাবাদী লিখেছেন, “ছাগলামি ছাড়ুন, সাহস নিয়ে অন্তত স্বীকার করুন যে পাকিস্তান ভাল ক্রিকেট দল নয়।” অথচ একজন পক্ষপাতহীন মানুষ তার লেখা দেখলেই বুঝতে পারবে যে এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ভাল ক্রিকেট দলের স্বীকৃতিটাই লুকিয়ে আছে। কাজেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশী সমর্থকদের ছাগল প্রমাণ করতে গিয়ে লেখক নিজেই যে একটা ছাগল সেটাই কি প্রমাণ করলেন না?
সুষুপ্ত পাঠক নামের এক ব্লগার তার ব্লগে লিখেছেন যে, “আমরা মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না।”
(https://www.amarblog.com/index.php?q=susupto-pathok/posts/177806)
এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় কোন টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারে না দেখেই কিন্তু মানুষ পাকিস্তান বা ভারতকে অনেকটা বাধ্য হয়েই সাপোর্ট করে। কারণ, তাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে, যেটা বাংলাদেশ দলের নেই। আর বাংলা ভাষাভাষী অন্য ধর্মের অন্য কোন দেশও তো সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে সাথে খেলে না যে বাংলাদেশের মানুষ সেই দেশকে সমর্থন করবে। তাই, এখানে মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না—সেই কথা বলাটাও বোকামি। আর এখানে প্রশ্ন রাখতে হয় যে, বাঙ্গালী হলে কি একটা মুসলিম দেশ ভাল খেললে তাকে সাপোর্ট দেয়া যাবেনা?
এরকম আরও হাজারো ছাগল আমাদের দেশে রয়েছে, পাকিস্তান তো পাকিস্তান, পাকিস্তানের মানুষজনদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ‘মারখোর উমুক’, ‘মারখোর তুমুক’ টাইটেল লাগিয়ে দেয়, সেই লোকটা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সজ্জনই হোকনা কেন। দেশের প্রয়জনে, দেশের ক্রান্তিলগ্নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার, মাঠে নামার দরকার এরা অনুভব না করলেও মনে মনে একটা প্রশান্তি তারা লাভ করে এই ভেবে যে—“যাক, আর কিছু না হোক পাকিস্তান, পাকিস্তানী আর পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের সমর্থকদের তো অন্তত ফেসবুক আর ব্লগে শোয়ায় দিছি…”
(৪)
খেলাধুলার ময়দানে মানুষ সেই সব ক্রিকেট শক্তিকেই সমর্থন দিয়ে থাকে, যারা কিনা অনেক দূর যাওয়ার, বিশেষ করে শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। যেমন, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। তাই, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দলকে সমর্থনের প্রয়োজন মনে করেনা।
তাইতো, সাফ ফুটবল বাংলাদেশে আয়োজন করা হলেও পাকিস্তানের বা ভারতের ম্যাচের সময় পাক বা ভারতী পতাকা উড়াবার ঘটনা চোখে পড়েনা।
কিন্তু, ক্রিকেট খেলার ব্যাপারটা ভিন্ন। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফেভারিট থাকেনা। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যাতা নেই। বিশ্বের সেরা দল হিসেবে র‍্যাঙ্কিং-এর ১-২-৩-এ থাকার যোগ্যতাও হয় নাই। এখানে স্বাভাবিকভাবেই তাই মানুষ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দলকেই সাপোর্ট করে। তাইতো, ভারত বা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন দিতেই তাদের ম্যাচে বাংলাদেশের মানুষেরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি নিয়ে আসে। এসব দলকে মানুষ সমর্থন দেয় এই জন্য যে, তারা চ্যাম্পিয়ন দলের সমর্থনকারী হতে চায়। বাংলাদেশের যদি সেইসব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা থাকতো, তবে সাফ ফুটবলের মত সেইসব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই শুধুমাত্র সমর্থন পেত। অন্য কোন দেশের সমর্থন দিতে মানুষ টিভির সামনে বসতোনা, বা স্টেডিয়ামে যেতনা।
আর এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন। বাংলাদেশ টেস্ট বা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার অনেক আগে থেকেই পাকিস্তান বা ভারত বিশ্ব ক্রিকেটের সফল দল এবং বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই তাদের সমর্থন করে এসেছে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ যতদিন না পর্যন্ত ক্রিকেটীয় সাফল্যে ভারত-পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সমপর্যায়ে যেতে না পারছে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ অন্য দলকে সাপোর্ট করবেই।
আর একটা মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেই দেশের বেশিরভাগ মানুষ সাপোর্ট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ইসলাম ধর্ম জিনিসটা বাংলাদেশের মুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে অনেক গভীরভাবে কাজ করে। পাকিস্তানের চিত্তাকর্ষক, রোমাঞ্চকর খেলার ধরনের কথা না হয় আবার উল্লেখ নাই করলাম। এজন্য তাদের নব্য রাজাকার বলা শুধু ভুলই নয়, আমানুষিক। এখানে আমি ‘সবুজ’ নামে আমার এক ঢাকা কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কথা উল্লেখ করবো, যে কিনা পাকিস্তানের সমর্থন করে, তবে অবশ্যই বাংলাদেশের পর। এইবারের এশিয়া কাপ ২০১৪-এ বাংলাদেশ-পাকিস্তান’ ম্যাচে বাংলাদেশের নিশ্চিত জেতা ম্যাচ আফ্রিদি যখন একের পর এক ছক্কা মেরে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ও আমাকে বললো, “ভাই, আফ্রিদি একটা কইরা ছক্কা মারে, আর আমার মনে হইতাছে কেউ আমার বুকে একবার কইরা ছুরি মারতেছে ভাই”।
এখন, উগ্র জাতীয়তাবাদী ছোট ভাই রাহিন রায়হানের বক্তব্য অনুযায়ী আমার আরেক ছোট ভাই সবুজতো তাহলে একজন ‘নব্য রাজাকার’। একজন ‘নব্য রাজাকার’-এর বাংলাদেশের পরাজয়ে বুকে ছুরির আঘাত পাওয়ার মত ব্যাথা হয়! ভালো তো, ভালো না?
সবুজের মত মানুষকে নব্য রাজাকার ট্যাগ দিতে গেলে বিশেষ পরিমাণে বর্বর, অসভ্য, ফ্যাসিস্ট আর অমানুষ হতে হবে। রাহিন রায়হানের মত মানুষদের নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, আসলে তার নিজের মনমানসিকতা কোন পর্যায়ের…।
আমরা শুধু পাকিস্তান পাকিস্তান বলি, অন্য দেশগুলোর কথা বলি না কেন, ভারতের কথা বলি না কেন? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যদি দেশকে ভালোবেসে হয়, তাহলে ভালো কথা। কিন্তু ইসলাম বিরোধীতাঁর কারণে যদি হয় তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।
কই, ভারতকে  তো দেশের ১০-১৫% লোক সাপোর্ট করে। ভারতকে সাপোর্ট করা ঠিক হবেনা, এমন কোন লেখা তো চোখে পড়ে নাই। ৭১’ সালের পর ভারত কি আমাদের সাথে কম করেছে?
আর এটাওতো সত্য যে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সহমরমী, অন্য কোন দেশের ক্রিকেটাররা তা কমই আছেন।
৭১’ সালে পাকিস্তানের বর্বর ভূমিকার কথা সবাই জানে। পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেজন্য ক্ষমা চায়নি,  এটাও সত্য। কিন্তু, বাংলাদেশে সরকার তো অনেক আগেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিয় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করা অনৈতিক বা অনুচিত হবে কেন?
পরিশিষ্ট
যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থনের বিরোধিতা করছেন, তারা আশা করি পাকিস্তানের সাথে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিরোধিতাও করবেন । সার্কের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান যদি আঞ্চলিক উন্নয়নে একটা ভাল পরামর্শ দেয়, আর বাংলাদেশ তাকে সমর্থন করে, তাহলেওতো  (কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদীর চোখে) একাত্তরের চেতনার অবমাননা হবে, তাই নয় কি…?
যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি ক্রিকেট-বিশ্বে সত্যিই পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, তবে আশা করা যায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলোকে সমর্থন দেয়ার প্রবণতা অনেক কমবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিকট ভবিষ্যতে সেই সুখের দিন আমাদের উপহার দেবে বলে বিশ্বাস রাখি।

বিখ্যাত যে ১০টি প্রতিষ্ঠান চলে লিনাক্সে

শিরোনাম পড়ে যেকোন সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ভ্রু চুককানোই স্বাভাবিক। এমনকি কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি যে একটি অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে চলে তাই হয়ত অনেকের অজানা। তারমধ্যে বাংলাদেশে পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেমের যেমন ছড়াছড়ি তাতে না জানারই কথা। তাই লিনাক্স আবার কি জিনিস এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন।
লিনাক্স পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু অনেকেই মনে করেন লিনাক্স উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে অনেক জটিল। কিন্তু লিনাক্স ব্যবহারের পদ্ধতি একবার শিখতে পারলে পরবর্তীতে তা ব্যবহার করা অনেক সহজ। তবে ব্যাক্তিগতভাবে উইন্ডোজের ব্যবহার Companies-using-linuxবেশি হলেও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমই বেশি ব্যবহৃত হয়। আর বিশেষ করে সার্ভার নিয়ে কাজ করতে গেলে তো লিনাক্সের কোন বিকল্পই চিন্তা করা যায় না। এর প্রধান কারণ লিনাক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। লিনাক্সে কোনো ভাইরাস আক্রমণের ভয় নেই। আর এই অপারেটিং সিস্টেমটি খুব সহজেই নিজেদের যে কোনো কাজের জন্য মডিফাই করে নেয়া যায়।
এবার দেখে নেয়া যাক বিশ্বের নামিদামি কিছু প্রতিষ্ঠান যারা সবাই লিনাক্স ব্যবহার করে
১. গুগল: অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল তাদের সকল কাজকর্ম লিনাক্সের মাধ্যমেই পরিচালনা করে। গুগলের ইঞ্জিনিয়াররা লিনাক্সের একটি জনপ্রিয় ডিস্ট্রো কাস্টমাইজ করে গুবুন্টু হিসেবে ব্যবহার করছে। এভাবেই গুগলের সকল সেবাগুবুন্টুর মাধ্যমেই পরিচালিত হয়।
২. উইকিপিডিয়া: অনলাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এনসাইক্লোপিডিয়া (উইকিপিডিয়া) ২০০৮ সাল থেকে উবুন্টু ব্যবহার করে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা লিনাক্সের আরেকটি জনপ্রিয় ডিস্ট্রো রেড হ্যাট ব্যবহার করে থাকে। তবে এডমিনিস্ট্রেশন এর অংশগুলোতে উবুন্টুই ব্যবহার করা হচ্ছে।
৩. ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা: লিনাক্স ডট কম-এ প্রদত্ত তথ্য অনুসারে ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেই সবচেয়ে ব্যাপক আকারে রেড হ্যাট লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। লিনাক্স যেভাবে খুশি চালানো যায় বলেই বিশাল ইউএস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেত্রটি সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে। এর কোনো একটি ছোট ত্রুটিও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৪. ইউএসএ নেভি ও সাবমেরিন: FreeSoftwareMagazine.com এর তথ্যানুসারে ইউএসএ নেভি এবং নিউক্লিয়ার সাবমেরিনেও লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।
৫. স্পেনের সব সরকারী প্রতিষ্ঠান চলে লিনাক্সে: লিনাক্সের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার দেশ হিসেবে স্পেন বহুল পরিচিত। স্পেনে ২০০২ সাল থেকে সকলের কাছে লিনাক্স পৌঁছে দেয়ার জন্য স্পেন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। স্পেনের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানেই লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া জনগনের মাঝে লিনাক্স পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে সকল সরকারি কর্মচারিদের লিনাক্স সিডি প্রদানের পাশাপাশি ম্যাগাজিন এমনকি খবরের কাগজের সাথেও লিনাক্সের সিডি দেওয়া হতো। আর সে কারণেই স্পেনে লিনাক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
৬. ফ্রান্স সংসদ: ফ্রান্সের বিশাল সংসদ ভবনের সকল কম্পিউটারেই ২০০৬ সাল থেকে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা সকলকে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। এসব কম্পিউটারে বেশিরভাগ সফটওয়্যারই ওপেনসোর্স। ওয়েব ব্রাউজার হিসেবেও তারা ওপেনসোর্স ফায়ারফক্সকেই বেছে নিয়েছে। এছাড়া তারা ই-মেইলের জন্য ওপেনসোর্স ই-মেইল ক্লায়েন্টও ব্যবহার করছে।
৭. চিনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কমার্শিয়াল ব্যাংক: চীনের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকে ২০০৫ সাল থেকে লিনাক্স ব্যবহার করা শুরু হয় এবং ২০০৮ সালের আগেই তারা প্রতিটি ব্রাঞ্চেই লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে।
৮. বড় বড় স্কুল কলেজ: রাশিয়ায় ২০০৭ সালে ঘোষনা দেয়া হয় যে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিনাক্স চালানো বাধ্যতামূলক। কারণ বাংলাদেশের মতোই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবগুলোতেই পাইরেটেড উইন্ডোজ চালানো হতো। এরপর ধীরে ধীরে সকলশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই লিনাক্স ব্যবহার শুরু হয়। জার্মানির সকল ইউনিভার্সিটি গুলোকে ২০০৭ সালেই লিনাক্সের আওতায় আনা হয়। সুইজারল্যান্ডে আরও আগে ২০০৫ সাল থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এর অধিকাংশ প্রদেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্থানেও একই অবস্থা। সারা বিশ্বব্যাপি পরিচালিত ‘একজন শিশুর জন্য একটি ল্যাপটপ’ প্রোগ্রামটিতেও লিনাক্স ব্যবহার করা হয়েছে।
৯. এমাজন: ইন্টারনেটে বইপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের বড় প্লাটফর্ম এমাজন ডট কম ২০০১ সালের পর থেকে লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে। শুধুমাত্র ২০০৪ সালে লিনাক্সের কারণে এই কোম্পানির ১৭ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। বর্তমানে এমাজন.কমের সকল কম্পিউটারেই লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।
১০. প্যানাসনিক: ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যর বাজারে জনপ্রিয় প্যানাসনিক কোম্পানিও তাদের কাজের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করে। লিনাক্স ব্যবহারের পূর্বে কোম্পানিটিতে উইন্ডোজ ব্যবহার করা হতো। তবে উইন্ডোজকে যে কোনো কাজের জন্য কাস্টমাইজ করা যায় না বলে, সেই উইন্ডোজের জন্যই এই কোম্পানিকে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এরপর তারা লিনাক্স ব্যবহার শুরু করে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী লিনাক্সের একটি কাস্টমাইজ সংস্করন তৈরি করে তা আজও সফলতার সাথে ব্যবহার করে আসছে।
উপরে শুধুমাত্র কয়েকটি জনপ্রিয় ও বড় সেক্টরে লিনাক্সের ব্যবহারের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। এরকম আরও অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট ছোট কর্মক্ষেত্রগুলো তো থাকছেই। বাংলাদেশেও অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সহ ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোতেও লিনাক্সের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই বাংলাদেশে রয়েছে দক্ষ লিনাক্স অপারেটরদের জন্য অফুরন্ত কাজের সূযোগ। এছাড়া অন্য কাজের পাশাপাশি লিনাক্স শেখার মাধ্যমেও নিজের কাজের পরিধিটাকে বৃদ্ধি করা যায়।
http://www.public-post.com/naim/post/3516/